বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

অগ্রিম টাকা দিয়েও মেলেনি আইসিইউ, রোগীর মৃত্যু 

  •    
  • ১০ এপ্রিল, ২০২১ ১৫:৩৭

মগবাজারের হলি ফ্যামিলি রেড ক্রিসেন্ট হাসপাতালে করোনা রোগী ভর্তি করার ক্ষেত্রে অগ্রিম টাকা দেয়ার নিয়ম করেছে কর্তৃপক্ষ। ওয়ার্ডে ভর্তির ক্ষেত্রে ৪০ হাজার, কেবিনে ৭০ হাজার, আইসিইউতে ৮০ হাজার টাকা অগ্রিম জমা দিতে হয়।

রাজধানীর ডেমরা স্টাফ কোয়ার্টারের বাসিন্দা অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মচারী ফিরোজ উদ্দিন। ৩ এপ্রিল তার শরীরে করোনাভাইরাসের উপসর্গ দেখা দেয়। নমুনা পরীক্ষার দুই দিন পর করোনা পজিটিভ আসে।

শ্বাসকষ্টের সমস্যা দেখা দিলে ৫ এপ্রিল ফিরোজ ভর্তি হন বেসরকারি ফেমাস স্পেশালাইজড হাসপাতালে। অবস্থার অবনতি হলে সেদিনই বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি করা হয় তাকে। সেখানেও পরিস্থিতি জটিল হলে চিকিৎসক পরামর্শ দেন আইসিইউতে নিতে।

বেশ কিছু হাসপাতালে খোঁজ করে ফিরোজ উদ্দিনের ছেলে সায়েম রাজধানীর মগবাজারে হলি ফ্যামিলি রেড ক্রিসেন্ট হাসপাতালে ফাঁকা আইসিইউয়ের খোঁজ পান।

সায়েম জানান, হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ অগ্রিম এক লাখ টাকা দিলে আইসিইউ বেড দেবে বলে আশ্বাস দেয়।

তিনি জানান, তার পরিবারের পক্ষে সেই টাকা জোগাড় করা ছিল কষ্টসাধ্য। তারপরও টাকা জোগাড় করা হয়। ৭ এপ্রিল অগ্রিম টাকাও দেন। তবে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ আইসিইউ দেয়নি। এমনকি কোনো সিটও পাননি তার বাবাকে নিয়ে গিয়ে। অবশেষে সেখানেই অক্সিজেন স্বল্পতায় তার বাবার মৃত্যু হয়।

মগবাজারের হলি ফ্যামিলি রেড ক্রিসেন্ট হাসপাতালের বিরুদ্ধে অগ্রিম টাকা নিয়েও আইসিইউ না দেয়ার অভিযোগ উঠেছে। ছবি: নিউজবাংলা

পরিবারের দাবি, ৭ এপ্রিল রাত ১১টা ৩৫ মিনিটে ফিরোজ উদ্দিন অক্সিজেন স্বল্পতায় মারা যাওয়ার পর হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ তাকে নিয়ে যায় আইসিইউতে। পরে দাবি করে রোগী আইসিইউতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন।

ফিরোজ উদ্দিনের ছেলে সায়েম নিউজবাংলাকে বলেন, ‘হাসপাতালের লোকজন মিলে পরিকল্পিতভাবে আমার বাবাকে মেরে ফেলেছে। তারা আমার থেকে অগ্রিম টাকা নিয়ে আইসিইউ বেড দেয়ার কথা বলে। প্রায় এক ঘণ্টা ঘুরিয়ে শেষ পর্যন্ত একটা অক্সিজেন সিলিন্ডারেরও ব্যবস্থা করতে পারেনি তারা।’

তিনি আরও বলেন, ‘এখানে জরুরি বিভাগে কর্তব্যরত কর্মকর্তাকে টাকা দিয়ে আইসিইউ বেড কনফার্ম করার পরেও বেড চাওয়া হলে পরে দায়িত্বে থাকা কর্মকর্তা এ বিষয়ে দায়িত্ব নিতে পারবেন না বলে দায়সারা ভাব দেখায়। এমনকি বারবার রুম থেকে বের হয়ে চলে যেতে লাগে।’

রোগীর সঙ্গে থাকা রনি বলেন, ‘একটা হাসপাতালে কতটা অব্যবস্থাপনা আছে তা হলি ফ্যামিলি হাসপাতালে না আসলে বুঝতাম না। এখানে একজন আরেকজনের অজুহাত দিয়ে ফাঁকা বুলি ছেড়ে চোখের সামনে একটা রোগীকে মেরে ফেলল।’

হাসপাতালের জরুরি বিভাগের দায়িত্বে থাকা কর্মকর্তা ডা. জিতু নিউজবাংলাকে বলেন, ‘ফুল সাপোর্ট আইসিইউতে আমাদের বেড খালি ছিল না। আমাদের এখানে ১৫টি পূর্ণাঙ্গ টিআইসিইউ গত দুই সপ্তাহ ধরে ফাঁকা নেই।’

‘ফিরোজ আলমকে আইসিইউ দেয়ার কথা বলে ভর্তি করানো হলেও আইসিইউ দেয়া হয়নি। এমনকি অক্সিজেন সরবরাহ ব্যবস্থা করা হয়নি। আপনাদের অবহেলায় তিনি মারা গেছেন এমন অভিযোগ উঠেছে।’

নিউজবাংলার উল্লিখিত প্রশ্নের জবাবে এ চিকিৎসক বলেন, ‘সবকিছু তো আমি বলতে পারব না। তবে এটা বলতে পারি, ওই দিন খুব খারাপ অবস্থা ছিল, রোগীর প্রচণ্ড চাপ ছিল। ওই দিন অক্সিজেন সাপ্লাইয়ের খুবই সংকট ছিল।

‘আমাদের হাসপাতালে টোটাল জিনিসপত্র সেন্ট্রাল থেকে বণ্টন করা হয়। সেখান থেকে আসতে হবে তো। কিছু মিলিয়ে চিকিৎসা ব্যবস্থায় ক্রাইসিস চলছে। এটা সাফার করছে অনেকেই। হয়তো অক্সিজেন নিশ্চিত না করার কারণে মৃত্যু হয়েছে।’

রোগী ভর্তি করার জন্য অগ্রিম টাকা দেয়ার বিষয়ে তিনি জানান, করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগী ভর্তি করার ক্ষেত্রে অগ্রিম টাকা দেয়ার নিয়ম করেছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। ওয়ার্ডে ভর্তির ক্ষেত্রে ৪০ হাজার টাকা, কেবিনে ৭০ হাজার, আইসিইউতে ৮০ হাজার টাকা অগ্রিম জমা দিতে হবে।

এর ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে জিতু বলেন, ‘ওষুধ ও অন্যান্য সরঞ্জাম কিনতে রোগীর জন্য এমনিতেই এই টাকা ব্যয় হয়ে যায়।’

অক্সিজেন ব্যবস্থা ছাড়াই চড়া দামে বেডে রোগী ভর্তি করার অভিযোগের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘রাজধানীতে বেশ কিছুদিন ধরে করোনা রোগীর চাপ বাড়ছে। করোনা রোগীর হঠাৎ করে শ্বাসকষ্ট দেখা যাচ্ছে। অক্সিজেনের প্রয়োজন হচ্ছে।

‘এ ক্ষেত্রে যদি কোনো রোগীর স্বজন অক্সিজেনের ব্যবস্থা করতে পারে তাহলে আমরা সেই রোগীকে আইসিইউ রুমের মধ্যে বেড দিচ্ছি। তবে পূর্ণাঙ্গ আইসিইউ সুবিধা দিতে পারছি না।’

বিষয়টি নিয়ে হলি ফ্যামিলি রেড ক্রিসেন্ট মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক মোহাম্মদ মোর্শেদকে ফোন করা হলে ‘ব্যস্ত আছি’ বলে ফোন কেটে দেন।

পরে বারবার যোগাযোগ করা হলেও কলগুলো আর রিসিভ হয়নি।

এ বিভাগের আরো খবর